রিয়া, অহংকার বা লোক দেখানো ইবাদত বই
| Author: বাংলা ইসলামিক বুক | Date: Sep 04, 2016 | Time: 7:53 pm | Category: ইমাম গাযযালী রহ. | No Comment
বিসমিল্লাহীর রাহমানির রাহীম – রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত
খ্যাতি ও রিয়ার নিন্দা
>“ইহারাই পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবন ক্রয় করিয়াছে। অতএব ইহাদের শাস্তি লঘু হইবে না এবং ইহারা সাহায্যও পাইবে না।” সূরা বাকারা, আয়াত নং- ৮৬
রাসূলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেনঃ
“আমার উম্মতের জন্য আমি যেই বিষটির সর্বাধিক আশংকা করিতেছি, তাহা হইল রিয়া ও গোপন খাহেশ। অন্ধকার রাতে কঠিন পাথরের উপর কালো পিপীলিকা চলাচল করিলে যেমন টের পাওয়া যায় না তদ্রুপ ইহাও অনুভব করা যায় না।”
এই কারণেই মানুষের চরম শত্র এই রিয়া ও গোপন খাহেশের উপস্থিতি সম্পর্কে বড় বড় আলেমগণও অনুভব করিতে পারেন না। সুতরাং যাহারা আলেম নহে, এমন মূর্খ আবেদ ও মোত্তাকীদের পক্ষে তো উহা সম্পর্কে ওয়াকেফ হওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এই রিয়া হইল মানুষের জন্য চরম ক্ষতিকারক এক গোপন প্রতারণা। এই ক্ষতিতে আলেম, আবেদ, সাধক ও পরকালের পথিকগণ লিপ্ত। কারণ এই শ্রেণির লোকেরা রিয়াজত-মোজাহাদা ও সাধনার মাধ্যমে নিজেদের নফসকে পরাভূত করতঃ উহাকে যাবতীয় আত্মিক ব্যাধি হইতে মুক্ত করিয়া আল্লাহর আনুগত্য ও এবাদতের প্রতি নিবিষ্ট করিয়া রাখেন। এমতাবস্থায় তাহাদের আত্মা বাহ্যিক অঙ্গ-অবয়ব দ্বারা কোনরূপ গোনাহ করিতে পারে না। তো রিয়াজত-মোজাহাদা ও আত্মার উপর ক্রমাগত যাতনার পর উহা ইতে মুক্তির একমাত্র যে পথটি তাহাদের সম্মুখে খোলা থাকে তাহা হইল- নিজেদের নেক আমলসমূহ প্রকাশ করিয়া সাধারণ মানুষের ভক্তি-শ্রদ্ধ আকর্ষণ।
রিয়া, অহংকার বা লোক দেখানো ইবাদত বইটি থেকে এই আর্টিকেল লিখিত
সাধারণ মানুষের এই ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান লাভের ফলে আত্মার উপর রিয়াজত-মোজাহাদার যাতনা লাঘব হইয়া তদস্থলে এক অনাবিল আত্মসুখ অনুভূত হয়। এই শ্রেণির লোকেরা নিজেদের এবাদত ও নেক আমলসমূহ প্রকাশ করিয়া বেড়ায় এবং এইরূপ কামানা করে যেন মানুষ আমাদের রিয়াজত ও এবাদত সম্পর্কে অবগত হয়। অর্থাৎ নিজেদের এবাদত সম্পর্কে আল্লাহার অবগতিকে তাহারা যথেষ্ট মনে করে না। এই কারণেই মানুষের প্রশংসা লাভ করিয়া তাহারা তুষ্ট হয় আর আল্লাহর প্রশংসা করিয়া তাহাদের তৃপ্তি হয় না।
তাহারা এই কথা ভাল করিয়া জানে যে, আমরা যদি এবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত হইয়া যাবতীয় কামনা-বাসনা বর্জনপূর্বক সন্দেহযুক্ত বিষয় হইতেও পরহেজ করিয়া চলি, তবে মানুষ আমাদের বুজুর্গীর প্রশংসমায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিবে এবং লোক সমাজে আমাদের ইজ্জত ও সম্মান বৃদ্ধি পাইবে। লোকেরা আসিয়া আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত করিবে এবং আমাদের দর্শন লাভকে নিজেদের জন্য সৌভাগ্য ও গৌরবোর বিষয় মনে করিবে। দোয়া ও ফয়েজ লাভের উদ্দেশ্যে আমাদের শরণাপন্ন হইবে এবং কোন বিষয়ে আমরা যাহা সিদ্ধন্ত দিব তাহা মানিয়া লইবে। দেখিবামাত্র আমাদের খেদমত করিবে। মজলিসে সম্মানজনক আসন দিবে, বিনয়-বিনম্র আচরণ করিবে এবং আমাদের চাহিদার প্রতি সব্যদা লক্ষ্য রাখিবে।
রিয়া, অহংকার বা লোক দেখানো ইবাদত
অর্থ্যাৎ এই সব অবস্থায় তাহারা এমনই আত্মসুখ লাভ করে যে, উহার ফলে গোনাহ ও পাপাচার ত্যাগ করা তাহাদের পক্ষে কিছুমাত্র কষ্টকর হয় না এবং পাবন্দির সহিত এবাদত-বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকা খুব সহজ হইয়া যায়। কেননা, এই ক্ষেত্রে তাহাদের আত্মা যেই সুখ লাভ করিতেছে তাহা সমস্ত সুখের সার নির্যাস বটে। এতাবস্থায় তাহারা মনে করে, আমাদের জীবন আল্লাহর জন্য নিবেদিত এবং আমরা অনুক্ষণ আল্লাহর এবাদত করিতেছি। অথচ তাহারা এমন গোপন খাহেশাত ও কামনা-বাসনার জালে আবদ্ধ যে, উহা কেবল প্রকৃত গুণীজনই উপলব্ধি করিতে পারেন। তাহারা মনে করে, আমরা এখলাসের সহিত আল্লাহর আনুগত্য করিতেছি এবং আল্লাহ পাক যাহা নিষিদ্ধ করিয়াছেন তাহা বর্জন করিয়া চলিতেছি। কিন্তু দুষ্ট নফস তাহাদের অন্তরে এমন গোপন খাহেশ স্তাপন করিয়া দেয় যেন উহার ফলে তাহারা নিজেদের এবাদত সমূহ মানুষের নিকট প্রকাশ করিয়া তাহাদের মিথ্য প্রশংসায় রিতুষ্ট হয়। অতঃপর এই গোপন খাহেশের কারণেই তাহাদের এবাদতের ছাওয়াব বিনষ্ট হয় এবং তাহারা নিজেদেরকে নেক আমলের ফজিলত হইতে বঞ্চিত করে।
এই পর্যায়ে তাহাদের নাম মোনাফেকদের তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হয়- অথচ তাহারা নিজেদেরকে আল্লাহর নৈকট্যশীল বান্দা মনে করিয়া থাকে। ইহা নফসের এক সূক্ষ প্রতারণা। আল্লাহর নৈকট্যশীল ছিদ্দিকগণের পক্ষেই প্রতারণার জাল হইতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
উপরের আলোচনা দ্বারা এই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল যে, রিয়া হইল মানবাত্মানর এক সর্বনাশ ব্যাধি এবং শয়তানের মস্ত বড় জাল। নিম্নে পর্যায় ক্রমে এই
রিয়া র পরিচয়, উহার উৎপত্তি, উপকরণ, স্তর, প্রকারভেদ এবং উহা হইতে আত্মরক্ষার উপায় বর্ণনা করা হইবে
তবে এই আলোচনার সুবিধার্থে আমরা ‘জাহ্’ তথা সুনাম-সুথ্যাতির উপর আলোকপাত করিতেছি।
সুনাম ও সুখ্যাতিকে বলা হয় জাহ্। এই সুনাম নিন্দনীয় ও ক্ষতিকর এবং অখ্যাত থাকা নিরাপদ ও কল্যাণকর। অবশ্যই কোন রূপ চেষ্টা-তদ্বির ও চাহিদা ছাড়াই যদি আল্লাহ পাক কোন ব্যক্তি বিশেষকে দ্বীন প্রচারের স্বার্থে সুখ্যাতি দান করেন, তবে এই রূপ স্বতঃস্ফূর্ত সুখ্যাতি ক্ষতিকর নহে।
রিয়া সম্পর্কে হাদীসের বাণী
হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসুলে আকরাম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন-
“মানুষের অনিষ্টে জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, কাহারো দ্বীন বা দুনিয়া বিষয়ে মানুষ তাহার দিকে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিবে। তবে আল্লাহ পাক যাহাকে হেফাজত করেন তাহার কথা ভিন্ন।”
সংশ্লিষ্ট প্রসঙ্গে হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) অনুরূপ এক বর্ণনা উল্লেখ করিয়া বলেন, আল্লাহর রাসুল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করিয়াছেন-
“মানুষের অনিষ্টের জন্য ইহাই যেথেষ্ট যে, মানুষ কাহারো দ্বীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে তাহার দিকে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিবে। তবে আল্লাহ পাক যাহাকে রক্ষা করেন তাহার কথা আলাদা। আল্লাহ তোমাদের ছুরত দেখন না বরং তিনি তোমাদের অন্তর এবং তোমাদের আমল দেখেন। (তারবানী আওসাত)
রিয়া সম্পর্কিত হাদীসের ব্যাখ্য ও বুযুর্গানে দ্বিনের কিছু ঘটনাবলী
হযরত হাসান বসরী (রহঃ) উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর লোকেরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, হে আবু সাঈদ! আপনি যখন পথ অতিক্রম করেন, তখন তো লোকেরা আপনার দিকেও ইশারা করে। তিনি বলিলেন, বর্ণিত হাদীসে এই ইশারার কথা বলা হয় নাই; বরং উহার অর্থ ইল, দ্বীনের মধ্যে কোন বেদআত জারী করার কারণে যদি মানুষ তাহার দিকে ইশারা করে কিংবা পার্থিব বিষয়ে কোন পাপাচার আবিষ্কার করার কারণে যদি যে ইশারার পাত্রে পরিণত হয়, তবে তাহা ক্ষতিকর।
হযরত হাসান সবরী (রাঃ) হাদীষটির এমন ব্যাখ্যা দিলেন যে, অতঃপর এই বিষয়ে আর কাহারো কোন প্রশ্ন রহিল না।
হযরত আলী (রাঃ) বলেন, ব্যয় কর কিন্তু নিজের দানশীলতার কথা প্রচার করিও না। নিজের ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে তুলিয়া ধরিও না যে, উহার ফলে মানুষের নিকট তোমার সম্পর্কে জানাজানি হয় এবং তোমাকে লইয়া লোকেরা আলোচনা করে। তুমি বরং নীরবে-নিভৃতে বসবাস কর যেন গোনাহ হইতে বাঁচিয়া থাকিতে পার। ধার্মিক লোকদিগকে সন্তুষ্ট কর এবং পাপী লোকদিগকে অসন্তুষ্ট কর।
হযরত ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ) বলেন, যেই ব্যক্তি সুনাম-সুখ্যাতি পছন্দ করে, সে যেন আল্লাহকে সত্যায়ন করে না। হযরত আইউব সাখতিয়াবী (রাঃ) বলেন, যেই পর্যন্ত তুমি ইহা পছন্দ না করিবে যে, মানুষ যেন তোমার ঠিকানা ও পরিচয় জানিতে না পারে; সেই পর্যন্ত তুমি যেন আল্লাহর সত্যায়ন করিলে না।
হযরত খালেদ ইবনে মে’দানের মজলিসে যখন অধিক লোক সমাগম হইত, তখন তিনি খ্যাতির ভয়ে মজলিস হইতে উঠিয়া যাইতেন। হযরত আবুল আলিযার নিকট তিন জনের বেশী লোক জড়ো হইলে তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিতেন।
সম্পূর্ণ অংশটি পড়তে রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত নামক বইটির পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করেন নিন।
Leave a Reply