তাবলীগ জামাতের সমালচনা ও তার জবাব
| Author: বাংলা ইসলামিক বুক | Date: Aug 29, 2016 | Time: 4:25 pm | Category: দাওয়াত ও তাবলীগ, প্রশ্ন ও উত্তর, ফ্রি ডাউনলোড, বাংলা ইসলামিক বই, হযরত মাওলানা যাকারিয়্যা রহ. | No Comment
বিসমিল্লাহীর রহমানির রাহীম
“তাবলীগ জামাতের সমালচনা ও তার জবাব” এককথায় অসাধারণ একখানা Bangla Kitab। শাইখুল হাদীস হযরত মাওলানা যাকারিয়্যা রহ. রচিত এই কিতাবটি তাবলীগ বিরোধী বিভিন্ন প্রশ্নগুলো ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে! মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে আমাকে তাবলীগের সাথী হিসাবে কবুল করুন আর হযরত মাওলানা যাকারিয়্যা রহ. কে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করুন। আমিন।
প্রতিদিনের নিয়মমত আজও এই অতি মূল্যবান কিতাবটি থেকে কিছু অংশ টাইপ করে দিলাম।
=========================================================================
তাবলীগ জামাতের সমালচনা ও তার জবাব
দাওয়াত ও তাবলীগের নামে হযরত মাওলানা ইলিয়াছ রহঃ এর এ সুবিশাল আন্দোলনের গোড়া থেকেই এ অধমের কাছে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, অভিযোগ-অনুযোগ আসা আরম্ভ হয়। আর তখন শরীরও যেহতু সুস্থ ছিল তাই প্রতিটি পত্রেরই জবাব কম বেশী দিয়ে এসেছি।
আমার ধারণায় এ বিষয়ে অন্তত এক হাজার ঠিঠি লিখেছি। এর মধ্যে দু’একটি ছাড়া প্রায় সবগুলো একই ধরণের চিঠি লিছ। কিন্তু অধুনা কয়েক বছর যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার কারণে প্রতিটি চিঠির ভিন্ন ভিন্ন জবাব লেখানো আমার পক্ষে আয়াস সাধ্য হয়ে পড়েছে। তাই ইচ্ছা হল কতগুলো বহুল প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব পুক্তিকাকারে পাঠকের হাতে তুলে দেব।
তাছাড়া আরেকটি আশংকাবোধ করছি যে, হযরত থানুভী রহ., হযরত হুসাঈন আহমদ মাদানী রহ. প্রমুখ পূর্বসুরীদের অনেকেই বিভিন্ন খুটিনাটি বিষয়ে ভুল ধরিয়ে দিতে গিয়ে নিজেরাই সমালোচনার শিক্ষা হয়েছেন যে, এরা তাবলীগ বিরোধী। সুতরাং আমার ব্যাপারেও এ ধরনের আশংকা হচ্ছে। কেননা, আমি নিজেরও তাবলীগ জামাতও তাবলীগ জামাতের মুরব্বীদের ভুলত্রুটির সংশোধন করে থাকি। বরং আমার বোকামীই বলুন কিংবা সৎসাহসই বলূন, শ্রদ্ধেয় চাচাজান হযরত মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) ও হযরত মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.) সহ অন্যান্য নতুন-পুরাতন মুরুব্বীদের ব্যাপারেও ভুলক্রটি ধরিয়ে দিতে দ্বিধা করেনি। অনুরূপভাবে মক্কা, মদীনা, পাকিস্তান ও আফ্রিকার বন্ধু-বান্ধব এক কথায় কাউকেই ছাড়িনি। সুতরাং আমার বহু চিঠিতেই সমালোচনা ও অভিযোগ অনুযোগমূলক উক্তি মিলবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে তাবলীগ জামাত সম্পর্কে অর্থহীন ও অনির্দিষ্ট কোন সমালোচনার প্রতি আমি কখনও কর্ণপাত করিনি। কেননা, এগুলো নিছক কথামাত্র। যেমন, দিল্লীর ওলামা কেরামের ব্যাপারে অনেকের অভিযোগ, তাঁরা সমালোচকবৃন্দের সমালোচনাকে বাতাসের মত উড়িয়ে দিন; কোনই গুরুত্ব দেন না। এ ব্যাপারে আমি তো তাদের চেয়েও বেশী অগুরুত্ত্ব দিয়ে থাকি। তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ হলে, তা যে কোন বড় ব্যক্তি সম্পর্কেই হোক না কেন, আমি তার প্রতিবাদ করতে এবং সতর্ক করতে কোন প্রকার ত্রুটি করিনি।
বুখারী শরীফে রয়েছে- হযরত উসামা (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, কতই না ভাল হত যদি আপনি হযরত উছান (রাঃ) এর সাথে এ ফিৎনাগুলো সম্পর্কে যা তাঁর আমলে দেখা দিচ্ছে আলোচনা করতেন। জবাবে হযরত উসামা (রাঃ) বললেন, তুমি কি বল, তাঁর সাথে আমার সব আলোচনা তোমার কাছেও বলে চেড়াই। নিভৃতে আমার সাথে তাঁর অনেক কথাই হয়ে থাকে। তবে আমি ফিৎসার বন্ধ দরজা খুলে দিতে চাই না।
যাহোক, আমারও আশংকা চিল যে, আমার কোন সমালোচনা কিংবা সংশোধনমূলক কোন পত্রকে কেন্দ্র করে তাবলীগ বিরোধীরা এই অপপ্রচার না করে বসে যে, মাওলানা জাকারিয়া সাহেব ও তাবলীগ পছন্দ করতেন না, যা মোটেই ঠিক নয়। কেননা, এ মুবারক আন্দোলনেকে আমি এ যুগের জন্য অত্যন্ত জরুরী ও গুরুত্বের অধিকারী মনে করি। আমি নিজে মাদ্রাসা ও খানকার সাথে জড়িত হওয়া সত্ত্বেও অকুন্ঠচিত্তে ঘোষণা করি যে, এগুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনটি কোন কোন ক্ষেত্রে মাদ্রাসা ও খানকা থেকে অধিক ফলপ্রসূ ও উত্তম।
যা হোক, তাবলীগ জামাত সম্পর্কিত বহুল প্রচলিত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো নিম্নরূপঃ
তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধ সমালোচনা ও তার জবাব-১
জেহাদ সংক্রান্ত হাদীছগুলো তাবলীগ জামাতের সাথে সংশ্লিষ্ট করা-
তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ এই যে, এরা জেহাদ সংক্রন্ত সকল হাদীসগুলো টেনে এনে তাবলীগের সফরের সাথে জুড়ে দেন। আরও মজার কান্ড এই যে, এ প্রশ্ন আহলে ইলমদের পক্ষ থেকেই বেশী এসেছে। বুঝেই আসে না যে, আহলে ইলম এ ধরনের প্রশ্ন বিবাবে করেন। কেননা, যদি জেহাদ বলতে যুদ্ধ বিগ্রহই অধিক প্রচলিত, কিন্তু আভিধানিক অর্থে এবং কুরআন হাদীছের ব্যবহারে জেহাদ শুধু যুদ্ধ বিগ্রহের সাথেই নির্দিষ্ট নয়; বরং মূলতঃ জেহাদ অর্থ আল্লাহর দ্বীন জিন্দা করার লক্ষ্যে চেষ্টা সাধনা করা। আর এ চেষ্টার সর্বশেষ ও অনন্যোপায় পথ হল যুদ্ধ-বিগ্রহ। যুদ্ধ-বিগ্রহই জেহাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তাফসীরে মাজহারীতে-
এর ব্যাখায় লিখেছেনঃ জেহাদ সকল আমল অপেক্ষা উত্ত হওয়ার কারণ হল, তাহা ইসলাম প্রচার ও মানবগোষ্ঠির হেদায়েতের একটি কারণ। সুতরাং মুজাহিদের প্রচেষ্টায় যারা হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে এ মুজাদিতও তাদের যাবতীয় নেক আমলের অংশীদার হবে।
এও মনে রাখতে হবে যে, যাহেরী ও বাতেনী ইলম শিক্ষাদানের ফযীলত এরচেওে বেশী। কেননা, এর দ্বারাই ইসলামের প্রচার প্রসার বেশী হয়ে থাকে। এবার একটু বুকে হাত রেখে বলুন তো; সম্প্রতি তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে হেদায়েতের যে ব্যপক বিস্তৃতি লাভ করেছে তা অস্বীকার করার কোন জো আছে কি? এঁদের প্রচেষ্টাতেই তো আজ শত শত অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করছে (গীর্জাগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে মসজিদ বানানো হচ্ছে।)
জেহাদের আভিধানিক ও পারিভাষিক বিস্তারিত বিশ্লেষণ এ অধমের গ্রন্থ ‘আওযাজুল মাসালেক’ ও ‘লা-মেউদ্দারারির’ টীকায় আলোচিত হয়েছে। জেহাদের আভিধানিক অর্থ হল, কষ্ট সহ্য করা। আর শরীয়তের পরিভাভায় জেহাদ বলতে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহসহ নফস, শয়তান ও ফাসেক, ফাজেরদের সাথে মুজাহাদা করা সবগুলোকেই বুঝায়। আর কাফিরদের সাথে জেহাদ হাতের সাহায্যে, মুখের সাহায্যে ও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্নভাবে হতে পারে। এ সবগুলো অর্থেই কুরআন ও হাদীছের বিভিন্ন জায়গায় জেহাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।
যেমন রাসুলূল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“প্রকৃত মুজাহিদ যে নফসের সাথে জিহাদ করে”
{হাদীসখানা ইমাম বায়হাকী রচিত শি’আবুল ঈমান গ্রন্থের বরাতে মিশকাত শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে।}
ইবনে আরাবী তিরমিযি শরীফের ব্যাখায় লিখেছেনঃ সুফিয়া কেরামের মতে নফসের সাথে জেহাদই হল, জেহাদে আকবর তথা বড় জেহাদ। আর পবিত্র কুরআনের এ আয়াতে
এদিকেই ইংগিত করা হয়েছ।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- শত্রুর মুকাবেলায় যে জেহাদ করে সে প্রকৃত মুজাহিদ নয়; বরং প্রকৃত মুজাহিদ হল যে, ঐ দুশমনের সাথে জেহাদ করে যে দুশমন সর্বদা তার সাথে রয়েছে।
একবার রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ইরশাদ করলেন, “আমরা ছোট জেহাদ থেকে বড় জেহাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এখানে জেহাদে আকবর বলতে তরবারীর যুদ্ধ এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ উদ্দেশ্য নয়।
তাতে এও রয়েছে যে, আল্লামা রাযী (রহ:) ‘আত্-তাশাররুফ বি মা’রিফাতি আহাদীছিত্ তাসাউউফ’ গ্রন্থে তাফসীরে রুহুল মাআনী থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত-
এর ব্যাখা প্রসঙ্গে হযরত জাবের (রা)-এর একটি রিওয়ায়েত উল্লেখ করেছেন যে, একবার নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি জামাত যুদ্দ থেকে ফিরে এলে তিনি তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের আগমন অত্যন্ত শুভ। তোমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদে প্রত্যাবর্তন করলে। এসব রিওয়াতগুলোতো সনদগত কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও প্রথমতঃ ফাযায়েলের ক্ষেত্রে তা ক্ষমার যোগ্য। দ্বিতীয়তঃ বহুল সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে এই দুর্বলতা ক্ষমার যোগ্য।
বাকি অংশ পড়তে অবশ্যই সম্পূর্ণ পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করুন। আর এই কিতাবটি সোশাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলোতে অর্থাৎ আপনার আইডিতে শেয়ার করুন। আর ইসলামের মর্মবাণী পৌছে দিন আপনার সকল বন্ধুদের কাছে। আল্লাহ হাফেজ।
Leave a Reply