ইমাম বুখারী রহঃ
বিসমিল্লাহীর রহমানির রাহীম
bukhari sharif bangla বুখারী শরীফ বাংলা ভার্সন শেয়ার করতে যাচ্ছি। চলুন প্রথমে জেনে নেয়া যাক ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী সম্পর্কে কিছু…. এবং এর পরপরই পাবেন সম্পূর্ণ বুখারী শরীফের ডাউনলোড লিংক।
ইমাম বুখারী রহঃ জীবনী
ইমাম বুখারী রহঃ এর বংশানুক্রমিক তার নাম হচ্ছে মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ । মূলত তার নাম হচ্ছে মুহাম্মদ এবং উপনাম আবু আব্দুল্লাহ। তার উপাধি হচ্ছে আমিরুল মুমিনীন ফিল হাদীস। হিজরী ১৯৪, (৮৭০ঈসাই) শাওয়ালের ১৩ তারিখ শুক্রবার তৎকালীন খোরাসানের বুখরাতে বর্তমানে যা উজবেকিস্তান হিসাবে পরিচিত স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন এই বিখ্যাত মুহাদ্দিস। বুখরাতে জন্ম নেওয়ার ফলে তিনি ইমাম বুখারী (রহঃ) নামেই পরিচিত। তার পিতা হচ্ছেন ইসমাঈল। পিতামহ ইব্রাহিম। তার পিতাও একজন হাদিসবিদ ছিলেন।
পিতার দিক থেকে ইমাম বুখারী রহঃ যেমন একজন বিখ্যাত মুসলিম হাদিসবিদের সন্তান তেমনি মাতার দিক থেকেও কোন অংশে কম নয়। তার মাতা ছিলেন একজন পরহেজগার-মহীয়সী নারী।
ইমাম বুখারী রহঃ এর বাল্যকাল
ঘটনা বর্ণিত আছে যে, ইমাম বুখারী রহঃ ছোটবেলায় একবার অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তখন তার মা কান্না করতে করতে মহান আল্লাহ-তায়ালার কাছে ইমাম বুখারী রহঃ এর আরোগ্য লাভের দোয়া পেশ করতে থাকেন। একদিন রাত্রে মা স্বপ্ন দেখেন হযরত ইব্রাহিম আঃ এসে বলছেন, “আল্লাহ্ তায়ালা তোমার দোয়া কবুল করেছেন। আল্লাহর দয়াতে তোমার পুত্র চোখের জ্যোতি ফিরে পেয়েছে।” রাত্রি পার হয়ে সকালই ইমাম বুখারী রহঃ এর মা দেখলেন ইমাম বুখারী রহঃ তার চোখের আলো আবার ফিরে পেয়েছেন। এই ঘটনা থেকেই বুঝা যায় ইমাম বুখারী রহঃ এর মাতা কেমন মহীয়সী-পরহেজগার নারী ছিলেন। অর্থাৎ যেমন গাছ তেমনি তার ফল!
তবে শৈশবেই বাবাকে হারান ইমাম বুখারী রহঃ কিন্তু পিতা রেখে যাওয়া অঢেল সম্পদের ফলে কোন রূপ অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার প্রভাব পড়ে নি তার উপর।
৯ বছর বয়সেই ইমাম বুখারী রহঃ কুরআন হিফজ করেন এবং দশ বছর বয়স থেকেই তিনি হাদিস শিক্ষা শুরু করেন। হাদিস শিক্ষা জীবনে ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনে ঘটে গেছে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ও মজার কিছু ঘটনা।
সাধারণত হাদীসের ক্লাশে সকল ছাত্ররা হাদীসগুলো নোট করে রাখতো, কিন্তু ইমাম বুখারীঃ কোন দিনই নোট করে রাখতেন না। এভাবে ষোল দিন অতিবাহিত হলো। সকল সহপাঠীরা ইমাম বুখারী রহঃ কে প্রতিদিনই বলতে লাগলেন, “আপনি কোন হাদীস নোট করে রাখেন না কেন?” ইমাম বুখারী উত্তর দিলেন, সকলেই আমাকে প্রতিবার একই প্রশ্ন করছে। যে সমস্ত হাদিস আপনারা নোট করেছেন তা আমাকে পড়ে শোনান। সকলেই তা দেখানোর পর তিনি সকল হাদিস ঠোটস্থ শুনিয়ে দিলেন, শুধু তাই নয় আরোও পনেরো হাজার হাদীস অতিরিক্ত শুনিয়ে দিলেন। সেদিন থেকেই সহপাঠীরা বুঝতে পারলেন যে, ইমাম বুখারী একজন ব্যতিক্রম-অসাধারণ মুহাদ্দিস।
এছাড়াও আরোও অনেক ধরনের ঘটনা আছে ইমাম বুখারীর শিক্ষাজীবনে।
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, আমার অন্তরে এক লক্ষ সহীহ হাদীছ ও দুই লক্ষ যঈফ হাদীছ মুখস্ত রয়েছে। (সুবহান আল্লাহ)
বুখারী শরীফ ও হাদীস সংগ্রহঃ Bukhari Sharif
বুখারী শরীফ এর প্রতিটি হাদিসের সংগ্রহ ও প্রমাণের জন্য ইমাম বুখারী রহঃ কে যাত্রা করতে হয়েছে শত সহস্র মাইল। এমন ঘটনাও বর্ণিত আছে যে একটি হাদিস সংগ্রহের জন্য তিনি দুই মাসের রাস্তাও পাড়ি দিয়েছেন।
বিভিন্ন দেশে ভ্রমনের মাধ্যমে তিনি লক্ষাধিক সহীহ হাদীস সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি হাদিস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মক্কা, মদিনা, সিরিয়া, হিজাজ, মিশর ও ইরাকসহ আরোও অনেক দেশে ভ্রমণ করেছেন।
এসকল দেশে ভ্রমণ করতে গিয়ে তাকে অনেক মুহাদ্দিসদের কাছে পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে। এসকল পরীক্ষায় তিনি সফল ভাবে নিজের যোগ্যতার ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন।
ইমাম বুখারী রহঃ এর শেষ জীবনঃ
ইমাম বুখারীর সুনাম যখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন ইমাম বুখারী রহঃ কে; বুখরার শাসনকর্তা খালিদ বিন আহমাদ যুহলী দরবারে এসে তার সন্তানদেরকে হাদিস শিক্ষাদানের জন্য আহব্বান জানান কারণ সাধারণ জনগণের সাথে মসজিদে বসে আমীরের ছেলেদের পক্ষে সহীহ বুখারী পড়া সম্ভব নয়।
কিন্তু বয়বৃদ্ধ-জ্ঞানবৃদ্ধ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ ইমাম বুখারী এটাকে হাদিসের অবমাননা মনে করলেন এবং আমিরের প্রস্তাব প্রত্যাখান করলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন যে, তার সন্তানদের যদি হাদিস শিক্ষা দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তাহলে যেন মসজিদে পাঠিয়ে দেন।
খালিদ বিন আহমাদ যুহলী এই প্রত্যাখানকে অপমান হিসাবে নিলেন এবং ইমাম বুখারীকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলেন। এহেন ষড়যন্ত্রের প্রেক্ষিতে ইমাম বুখারী নিজ জন্মস্থান বুখারা ত্যাগ করে নিশাপুরে হিজরত করলেন।
বুখারা ত্যাগ করার সময় ইমাম সাহেব আল্লাহর কাছে এই দুআ করেন যে, “হে আল্লাহ্! সে আমাকে যেভাবে অপমান করে বের করে দিলো তুমিও তাকে অনুরূপ লাঞ্চিত করো।”
এই দোয়ার মাত্র কিছু দিন পরেই বুখরার শাসনকর্তা খালিদ বিন আহমাদ যুহলীর বিরুদ্ধে সে দেশের জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং আমীরকে ক্ষমতাচু্ত্য করে বাগদাদের জেলে প্রেরণ করে দেয়। পরবর্তীতে বাগদাদের জেলেই বুখরার শাসনকর্তা খালিদ বিন আহমাদ যুহলী মৃত্যু বরণ করেন।
নিশাপুরেও ইমাম বুখারি রহঃ খুব বেশী দিন থাকতে পারলেন না। অনুরূপ দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি সমর কন্দের খরতঙ্গ এ চলে যান। এবং সেখানেই ২৫৬হিজরী, শাওয়ালের এক তারিখ (৩১ আগস্ট ৮৭০ঈসাই) শুক্রবার ঈদুল ফিতরের রাত্রিতে ইহকাল ত্যাগ করেন। ঈদের দিন জোহরের নামাযের পর তার নামাযে-জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
বর্ণিত আছে, দাফনের পরে তার কবর থেকে মিসকের সুগন্ধির থেকেও বেশী সুঘ্রাণ বের হতে থাকে। এই অবস্থা লোকেরা তার কবরের মাটি নেওয়া শুরু করে এবং এর প্রেক্ষিতে সীসার প্রাচীরের মাধ্যমে ইমার বুখারী রহঃ এর কবরটিকে মজবুতভাবে ঢেকে দেওয়া হয়।